করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারর সাতদিনের বিধিনিষেধে আটকে পড়া মানুষজনকে বিশেষ ব্যবস্থা দ্বিতীয় ডোজের টিকার ব্যবস্থা করবে সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অতিরিক্ত মহাপরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বুধবার দুপুরে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান।
করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় সরকার যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে তাতে রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় অনেক মানুষ আটকে পড়েছেন। অনেকের মোবাইলে এসএমএস গেলেও টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার ক্ষেত্রে সংশয়ে আছেন।
সারা দেশের সঙ্গে সব দলনের পরিবহন বন্ধ থাকায় নির্ধারিত কেন্দ্রে গিয়ে অনেকেই টিকা নিতে পারবেন না। তাদের জন্যই বিশেষ ব্যবস্থা করবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘লকডাউনে অনেকেই টিকা নিতে নির্ধারিত কেন্দ্রে যেতে পারছেন না। তাদের ভয় পাওয়ার কারণে নেই। ৮ থেকে ১২ সপ্তাহের মধ্যে যেকোনো সময় টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিতে পারবেন তারা।
‘যদি কোনো কারণে লকডাউন কার্যক্রম দীর্ঘয়িত হয়, সে ক্ষেত্রে ১২ সপ্তাহের মধ্যে যাতে আপনারা টিকা নিতে পারেন তার ব্যবস্থা নেয়া হবে। সরকার যে গণটিকাদান কর্মসূচি হাতে নিয়েছে এটা নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই।’
ফ্লোরা জানান, ইতোমধ্যে ৭ লাখ ৩৫ হাজারে বেশি মানুষ টিকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে যে টিকা মুজত রয়েছে সেটা দিয়েই দ্বিতীয় ডোজ চলমান থাকবে। টিকাদান কর্মসূচি আশারূপভাবে এগিয়ে চলছে। আমার মুজত টিকা শেষ হওয়ার আগেই নতুন টিকা পেয়ে যাব।’
বাংলাদেশ শুরু থেকেই অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা উদ্ভাবিত কোভ্যাক্স টিকার ওপর নির্ভর করে আসছে। তিন কোটি ৪০ লাখ টিকা কিনতে ভারতীয় উৎপাদক প্রতিষ্ঠান সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছে সরকার।
ভারত প্রথমে ২১ জানুয়ারি ২০ লাখ টিকা উপহার হিসেবে পাঠায়। আর ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিয়ে আসেন আরও ১২ লাখ টিকা।
তবে বাংলাদেশ টিকা কিনতে যে চুক্তি করেছে তা পাওয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়।
কথা ছিল সিরাম প্রতি মাসে ৫০ লাখ করে টিকা পাঠাবে। ২৫ জানুয়ারি ৫০ লাখ পাঠানোর পর ২৩ ফেব্রুয়ারি আসে আরও ২০ লাখ। এরপর এখনও কোনো টিকা আসেনি।
এর মধ্যেই সরকার টিকার দ্বিতীয় ডোজ দেয়া শুরু করেছে। কিন্তু হাতে পর্যাপ্ত টিকা নেই। ফলে সিরাম টিকা না পাঠালে প্রথম ডোজ যাদের দেয়া হয়েছে, দ্বিতীয় ডোজ তাদের দেয়া সম্ভব নাও হতে পারে।
ভারতের উপহারের ৩২ লাখ মিলে সরকারের হাতে টিকা আছে ১ কোটি ২ লাখ। এ পর্যন্ত ৬১ লাখের বেশি মানুষ টিকা নিয়েছেন। ফলে দ্বিতীয় ডোজ দেয়ার জন্য ৪২ লাখ টিকা আছে। এর মধ্যে সরকার টিকার বিকল্প উৎস হিসেবে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গেও যোগাযোগ শুরু করেছে।
মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, ‘শুধু কেনা টিকা নয়, অন্য উৎস থেকে টিকা নিশ্চিতে আমরা কাজ করেছি। দেশের ২০ শতাংশ জনগণের টিকা নিশ্চিতে কোভ্যাক্সের সঙ্গে চুক্তি রয়েছে। আমরা আশা করছি এই টিকাও যে কোনো সময় দেশে আসবে।’
তিনি জানান, দেশের ৮০ শতাংশ জনগণের টিকা নিশ্চিতে আরও দুইটা প্রকল্প নিয়ে কাজ চলছে, এর মধ্যে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে একটি যুক্তি করা হয়েছে। সেখানে শুধু টিকা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ৫০০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
এ ছাড়া এডিবির সঙ্গে আরও একটি চুক্তি হচ্ছে বলে জানান তিনি। বলেন, শুধু টিকা কার্যক্রমে সহযোগিতার জন্য ৯৪০ মিলিয়ন ডলারের চুক্তিটি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
সেব্রিনা বলেন, ‘শুধু ভারতের টিকা ওপরে আমরা ভরসা না করে বিভিন্ন দেশের যে টিকাগুলো সেই টিকা পেতেও আলোচনা চলছে। এই টিকা আমাদের দেশে ব্যবহার করা যায় কি না সেটা নিয়েও আমার কাজ করছি।’
দেশিও ভাবে কেউ যদি টিকা উৎপাদন করতে চায় তাদের সঙ্গেও কাজ করতে চায় সরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বিভিন্ন কোম্পানির সঙ্গে যোগাযোগও করছেন বলে জানান তিনি।